কক্সবাজার সাগরতীর : বড় বড় অপরাধ ১০০ ঝুপড়িতে

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার •


কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের তীরে বিভিন্ন পয়েন্টে শতাধিক ঝুপড়ি বসতঘর রয়েছে। এছাড়া পরিত্যক্ত তিনটি বহুতল ভবনে রয়েছে ৫০টির অধিক ছোট ছোট ঘর। অধিকাংশ ঝুপড়ি ঘর গড়ে উঠেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জমিতে।

এছাড়া সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ঝাউবাগানের ভিতরে রয়েছে ৩০টির অধিক ঝুপড়ি। এসব ঝুপড়ির অধিকাংশ ঘরে চলে অবৈধ কর্মকাণ্ড। দিনের বেলায় যেনতেন রাত হলেই সাগরতীরের এসব ঝুপড়িতে চলে মাদক সেবন ও বিক্রি, যৌন ব্যবসা ও অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়। অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবেও ব্যবহার হয় ঝাউবাগানের ভিতরে এসব ঝুপড়ি। সৈকত এলাকায় একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠিত হোটেলের নামে হোটেল রোডের পূর্বপাশে একটি পাঁচতলা পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। ভবনের নিচ তলায় রয়েছে টিনের বেড়া দিয়ে ১৫টির অধিক ছোট্ট ছোট্ট ঝুপড়ি রুম। রুমের ভিতরে কোথাও বালিশ আবার কোথাও খাট (বিছানা)।

প্রায় রুমের মেঝেতে পড়ে রয়েছে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম। ভাঙাচোরা টিন দিয়ে রুম গুলো তৈরি করা হয়েছে। কয়েকটি রুমে কয়েকজন যুবকদের উপস্থিত দেখা গেলেও বেশির ভাগ রুম কিন্তু খালি। যেসব রুম খালি পড়ে আছে এসব রুমে বালিশ, খাট ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম দেখা যায়। সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকার রাসেল নামে একব্যক্তি পরিত্যক্ত ভবনে রুম গুলো তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। রাসেলের সাথে রয়েছে মালেক, মোরশেদ ও ইউসুফ। রাসেল একজন মাদক সেবনকারী বলে সুগন্ধা পয়েন্টের অনেক ব্যবসায়ী জানান।

এই পরিত্যক্ত ভবনের কাছাকাছি চারতলার আরেকটি পরিত্যক্ত ভবন। চারতলার ভবনটি বেশ লম্বা। ওই ভবনেও একই অবস্থা। সেখানে টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৩০টি অধিক ঝুপড়ি রুম। ঝুপড়ি এসব রুমে অনেক নারী-পুরুষের উপস্থিত দেখা যায়। চারতলার এই পরিত্যক্ত ভবনটি দেখা শুনা করে রুবেল নামে একব্যক্তি। ওই ভবনটি পতিতাদের ডেরা হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। রুবেল এসব বিষয় গুলো দেখা শুনা করে এবং ভাড়া দিয়ে মাসিক ও দৈনিক টাকা আদায় করে বলে জানা গেছে।

এছাড়া এখানেই রয়েছে ৬টি ঝুপড়ি ঘর। এসব ঝুপড়িতে নিয়মিত মাদক সেবন চলে বলে জানা গেছে। এমনকি অনেক চিহ্নিত অপরাধীরা আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে এসব ঝুপড়ি। এখানকার পরিত্যক্ত ভবন ও ঝুপড়ির সামনে বেশ কয়েকটি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সাইন বোর্ড দেখা যায়। সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে “এই সম্পত্তির মালিক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর পক্ষে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার”। পরিত্যক্ত ভবন ও রাস্তার পাশে গড়ে উঠা ঝুপড়ি গুলোর জমি বর্তমানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশ মুখে একটি পুলিশ বক্স রয়েছে। পুলিশ বক্সের পিছনে রয়েছে দুটি ঝুপড়ি। ওই ঝুপড়িতে দেহ ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। শফি নামে একব্যক্তি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে। এরপর সেখানে যৌন ব্যবসার জন্য ভাড়া দেয়া হয়।

সুগন্ধা পয়েন্টের দক্ষিণে ৯তলার একটি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। আইনি জটিলতায় ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। ওই ভবনের এক থেকে চারতলা পর্যন্ত টিনের বেড়া দিয়ে ২০টির অধিক ঝুপড়ি তৈরি করা হয়েছে। অনেক স্থানে টিনের বেড়া না থাকলেও শোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যে যার মতো করে সেখানে আস্তানা গেড়েছে বলে জানা গেছে। মাদক সেবন ও অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বেশ নাম রয়েছে ভবনটির। ইতিমধ্যে অনেক অপরাধীকে পুলিশ ওই ভবন থেকে আটকও করেছিল। এখানে ঝাউবাগানের ভিতরে রয়েছে ১৫টির অধিক ঝুপড়ি ঘর। মাসিক ৩০০ টাকা বা এক হাজার টাকায় ঝুপড়ি গুলো ভাড়া দেন শামসু। যে ঝুপড়ি গুলোতে মাদক বিক্রি, সেবন ও যৌন কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

এছাড়া সৈকত পোস্ট অফিসের পশ্চিমে রয়েছে ১৫টি মতো ঝুপড়ি ঘর। জেলা প্রশাসনে খাস জমিতে এসব ঘর গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। এই ঝুপড়িতেই গত বুধবার রাতে এক পর্যটক নারীকে নিয়ে গণধর্ষণ করে সন্ত্রাসী আশিকুর ইসলামসহ তার সহযোগীরা। যে বিষয়টি বর্তমানে পুরো দেশে তোলপাড়। যৌন কর্মকা- ও মাদক কারবারিদের এসব ঝুপড়িতে অবস্থান বলে জানা গেছে। এসব ঝুপড়িতে অপরাধের আস্তানা ছিল ধর্ষক আশিকদের। এর একটু পর বালিকা মাদ্রাসা। মাদ্রাসার গেইটের বিপরীতে একটি গলি সোজা চলে যায় ঝাউবাগানের ভিতরে। সেখানেও রয়েছে ৮ থেকে ১০টি ঝুপড়ি ঘর। তবে এই জমিগুলো বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বলে জানা গেছে। বাহারছড়া এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি জানান, সন্ত্রাসী আশিকুর ইসলাম পশ্চিম বাহারছড়া এলাকার ছেলে। সে একসময় চোর ছিল। চোর থেকে ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীসহ বহু অপর্কমের ডন বনে যায়। আশিকের একটি ছিনতাইকারী গ্রুপ রয়েছে।

সুগন্ধা পয়েন্টের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন- এখানে কয়েকটি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ভিতরে চলে দেহ ব্যবসা। নিয়মিত চলে মাদক বিক্রি ও সেবন। এসব ভবনে অনেক পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে মারধরসহ মুক্তিপণ আদায়ের অনেক ঘটনা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) ছৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন- এসব পরিত্যক্ত ভবনে অবৈধ ঝুপড়ি ও আশপাশের ঝুপড়িগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছিল। হয়ত তারা আবার তৈরি করেছে। দুই একদিনের মধ্যে সাগরতীরের পাশে এসব অবৈধ ঝুপড়ি গুলো উচ্ছেদ করা হবে। একই সাথে যারা এসব ঝুপড়ি গুলো তৈরি করে ভাড়া আদায় করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এবিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ইতিমধ্যে পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সাথে হোটেল মোটেল জোনে অবৈধ স্থাপনা ও সমাজবিরোধী কর্মকা- বন্ধে অভিযান জোরদার করা হবে।